আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
দুই ভাই সাইদুল গাজী ও মামুন হাওলাদারকে দালাল রুবেল হাওলাদার ও তার সদস্যরা সৌদি আরবে পাঁচ মাস আটকে রেখে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে দালাল রুবেল ও সদস্যদের প্রতি। ভুক্তভোগীরা এ দালাল চক্রের খপ্পরে পরে সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে আমতলী উপজেলার লোচা গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সৌদি আরবের জেল হাজত থেকে সাইদুল মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেও অপর ভাই মামুন এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে সৌদি আরবে। এমন অভিযোগ করেন মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা নির্যাতিত সাইদুর গাজী। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে দালাল রুবেল পাঁচ লাখ টাকার ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছে বলে আরো অভিযোগ করেন সাইদুল গাজী।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম আমতলী গ্রামের আব্দুল হাই গাজীর ছেলে সাইদুল গাজী ও তার ফুফাতো ভাই মামুন হাওলাদারকে দালাল রুবেল হাওলাদার আট লাখ টাকা চুক্তিতে কোম্পানির ভিসায় সৌদি আরবে পাঠান। ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল জেদ্দা বিমান বন্দরে নামেন দুই ভাই। এরপর দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের একটি বদ্ধঘরে আটকে রাখেন। ওই স্থানে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় এমন অভিযোগ সাইদুল গাজীর। চার দিন পরে দালাল চক্রের আরেক সদস্য মনির এসে তাদের জেদ্দায় মরুভূমির মধ্যে একটি বন্ধ মুরগির ফার্মে নিয়ে যায়। ওই স্থানে তাদের ৫ মাস ১০ দিন আটকে রাখে তারা। দালাল রুবেলের নির্দেশে চক্রের সদস্যরা তাদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালায় এবং দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে সাইদুল ও মামুন দুই ভাই পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু দালাল চক্রের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সাইদুল অভিযোগ করেন দালাল রুবেলের নির্দেশে মনির তাদের আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে দের লাখ টাকা দেয় সাইদুলের পরিবার। এরপর দালাল রুবেল মেয়াদ উত্তীর্ণ আকামা দিয়ে দুই ভাইকে ছেড়ে দেয়। ওই আকামা নিয়ে পালিয়ে বেড়ায় তারা। এ ঘটনা নিয়ে দালাল রুবেলের সঙ্গে সাইদুলের কথা কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় রুবেল। পরে দালাল রুবেল ও তার সহযোগীরা গত বছর ১৪ ডিসেম্বর সৌদি পুলিশে সাইদুলকে ধরিয়ে দেয়। ১২ দিন কারাবাস শেষে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর সৌদি পুলিশ তাকে মুক্তি দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। অপরদিকে সাইদুলের ফুফাতো ভাই মামুন হাওলাদার সৌদি আরবে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিবারের কাছে তার কোনো হদিস নেই এমন অভিযোগ মামুনের বাবা মজিবুর রহমান হাওলাদারের। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাইদুল গাজী ও দালাল রুবেল হাওলাদারের মধ্যে এ নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে দালাল রুবেল হাওলাদার সাইদুল গাজীর বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকার ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে আমতলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সাইদুল গাজী কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, আমার ও আমার ভাইয়ের জীবনটাকে দালাল রুবেল শেষ করে দিয়েছে। আমিতো জেল খেটে দেশে ফিরেছি কিন্তু আমার ভাই কোথায় আছে তা আল্লাই জানে? তিনি আরো বলেন, দালাল রুবেল হাওলাদার কোম্পানির ভিসা দেয়ার কথা বলে আমাকে ও আমার ফুফাতো ভাইকে সৌদি আরবে পাঠান। সৌদি নিয়ে দুই দালালের কাছে আমাদের বিক্রি করে দেয়। দালাল চক্র আমাদের দুই ভাইকে ৫ মাস ১০ দিন আটকে রেখে নির্যাতন শেষে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে। পরে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, দালাল রুবেল আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। এখন আবার আমাকে হয়নারি করতে থানায় পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata